সাহিত্যে কবিতা-ই আদি । আর অনন্তকাল ধরেই সাহিত্যে একটু বেশি আদর পায় কবিতা-ই । সে কোনো বিশেষ নিয়মে আবদ্ধ নেই কখনোই । কবির কাব্যবিলাসে কবিতা সময় সময় বদলেছে নিজেকে । অন্য রূপে, অন্য আঙ্গিকে, অন্য চিন্তায়, অন্য চেতনায় ক্রমাগত নিজেকে পাল্টে ফেলায় কবিতার ধর্ম । আজকের এই তথ্যপ্রযুক্তির শাসনকালে, i-যুগে কবিতা প্রক্রিয়াজাতকরণ i-সাহিত্যের একটি বিশেষ কর্মসূচী । এর অন্যতম হল ব্রাউজিং কবিতা । কবিতার এই 'অন্য অন্বেষণ'-এর কাজটি করছে ব্রাউজিং কবিতা ।
কমপিউটারের জগতে ডেটা প্রোসেসিং ইনফরমেসন প্রোসেসিং অর্থাৎ উপাত্ত / তথ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ যেমন একটি বিষয় তেমন i-সাহিত্যে কবিতা প্রক্রিয়াজাতকরণও একটি বিশেষ কর্মসূচী । যখন বিশেষ করমসুচির মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে কবিতা নির্মাণের কাজটি সুসম্পন্ন করা হয় তা হল কবিতা প্রক্রিয়াজাতকরণ । ডেটা প্রোসেসিং-এ যেমন উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি করেন ডেটা প্রোসেসিং ম্যানেজার , কবিতা প্রক্রিয়াজাতকরণে এই 'ম্যানেজার' হলেন কবি । এ বিষয়ে সময়সুযোগমত বিস্তারিত আলোকপাত করার বাসনা রইল । এখন ব্রাউজিং কবিতা প্রক্রিয়াজাতকরণ আলোচনায় সরাসরি আসি ।
কমপিউটার পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্রাউজিং শব্দটি ব্যাবহার করা হয় অন্বেষণ বা খোঁজা অর্থে । শ্রদ্ধেয় তারিকুল ইসলাম চৌধুরী রচিত কমপিউটার অভিধান গ্রন্থে আমরা পাচ্ছি -
browsing [ব্রাউজিং] কমপিউটার পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক অজানা ফাইল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া ।
ব্রাউজিং কবিতায় কবি বিশেষ কোনো পদ্ধতিতে তাঁর নিজস্ব কবিচেতনা থেকে খুঁজে নেন কবিতা বিষয়ক ডেটা । অর্থাৎ যখন বিশেষ ব্রাউজিং পদ্ধতিতে কবি তাঁর নিজস্ব কবিচেতনা থেকে খুঁজে নেন কবিতা সম্পর্কিত ডেটা , নির্মাণ করেন কবিতা , সেই কবিতাই হল ব্রাউজিং কবিতা । আর এই যে কবিতা রচনার পূর্বে নির্ধারণ করে নেওয়া বিশেষ পদ্ধতিতে কবিতা সম্পর্কিত ডেটা খুঁজতে থাকা ,তা হল কবিতার ব্রাউজিং । আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্রাউজিং করি । যেমন একটি ঘটনার কথা বলি ।
প্রতি শনিবার আমরা i-সোসাইটি ও তথ্যসমাজ দিবস পালন করি । অনেক করমসুচির সাথেই আমাদের একটি বিশেষ কর্মসূচি হল দীর্ঘক্ষণের কবিতাপাঠ কর্মশালা গান আলোচনা আড্ডা নিয়ে একটি অনুষ্ঠান । গত ২৯.১১.২০১৪ ছিল iSociety ও তথ্যসমাজ দিবস ২জি.১১ । বিকাল ৩.৪৫-এ শুরু হল অনুষ্ঠান বিদ্যাসাগর হল সংলগ্ন মাঠ-এ । ওই দিন অনুষ্ঠানে দু-একজনের কবিতাপাঠ শেষ হয়েছে এইসময় উপস্থিত হলেন রাজু রানা দাস । আমি প্রস্তাব দিলাম আজ ব্রাউজিং কবিতার ক্রমশালা হোক । সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তও হয়ে গেল । সবাই খাতা পেন নিয়ে প্রস্তুত । আমি রানাদাকে একটি লোকগান গাওয়ার অনুরোধ করলাম । রানাদা একাধারে চিত্রশিল্পী অন্যদিকে কবি । আবার বেশ ভালো গান করেন । লোকগান । তো চমৎকার গাইলেন সইন্ধ্যা বেলায় নীল আকাশে বুধা ছরায় কে ... । এবার কবিতার ডেটা ব্রাউজিং একটি পদ্ধতি নেওয়া হল এই যে গানটির প্রথম লাইনের সাতটি শব্দের একেকটি শব্দ নিয়ে কবিতার ডেটা ব্রাউজিং করে সাতটি স্তবক রচিত হোক । এরপর গান কবিতাপাঠ অনুষ্ঠান চলতে থাকলো । মাঝেমধ্যে থেমে থেমে রানাদা মুখে মুখে প্রক্রিয়াজাত করে চললেন তাঁর ব্রাউজিং কবিতা । পেন নিয়ে তা লিপিবদ্ধ করে চললাম কখনো আমি কখনো সৌতিক মৃণাল লক্ষ্মণ । পাশাপাশি সেখানে কিংবা পরে অন্য সময়ে নিজেরাও একইভাবে কবিতার ডেটা ব্রাউজিং করলাম আমি, লক্ষ্মণ ঘোষ সুজিত পাত্র সেখ মুক্তার আলি মৃণাল কোটাল সৌতিক হাতী । রচিত হল সাত স্তবক বিশিষ্ট একটি করে ব্রাউজিং কবিতা । একগুচ্ছ ।
এভাবে বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে ব্রাউজিং কবিতা প্রক্রিয়াজাতকরণ করি আমরা । i-সাহিত্য পত্রিকার এই ষষ্ঠ বর্ষ প্রথম সংখ্যায় (১ পৌষ ১৪২১) উপরোক্ত সব কবিতায় প্রকাশ করছি । তথাপি আসুন ওই দিন অনুষ্ঠান চলাকালীন রচিত রাজু রানা দাস-এর ব্রাউজিং কবিতাটির পাঠসুখ নিই এখন ।
ব্রাউজিং কবিতায় রাজু রানা দাস
সুত্রঃ সইন্ধ্যা বেলায় নীল আকাশে বুধা ছরায় কে
সন্ধ্যা আরতিতে
উঠোনের কোণে
তুলসীতলায় চাঁদ হামাগুড়ি খায়
সেই চাঁদে দাগ আছে
এবং আমাদেরও
বেলায় বেলায় সময় চলে যায়
গায়ের চামড়ায় সূর্যস্নানে স্নান করে
ক্লান্ত চোখে চেয়ে থাকি
অনন্ত দ্রাঘিমা রেখায়
নীল আকাশ
ধূসর ঘুঁটের থাবায়
আকাশ আলোয়
নিসর্গ মাটি
চেয়ে আছি এই
বোঁদে দানায় ভেসে ওঠে
লাল মোরামের ছায়ালি মেঠোপথ
ছড়ায় মনে নিঃসঙ্গ ধূলিকণার
বাতাস
যেখানে প্রশ্ন করি
নিজেকে
কে ?
বিষয়টি বোঝানোর জন্য অতি স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার ব্রাউজিং কবিতার সামান্য একটি মাত্র আলোচনার সুত্রপাত করলাম । বিভিন্ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি কবিতার উপাদানগত বস্তুগত ও আরও বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে । সময়সুযোগমত নিশ্চয়ই আলোচনা করবো । তবে এই সংখ্যাই এটুকুই ।